Thursday, January 6, 2011

সৌদি আরব ডায়েরী -৩


কিন্তু সৌদি আরব আসাটা এত সহজ হয়নি। ইউনিভার্সিটি হতে ভিসা এডভাইজিং পেপার ঢাকা’র সৌদি এ্যাম্বাসি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমাকে বলা হলো এ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করতে। একদিন সকালে ফুরফুরে মেজাজে এ্যাম্বাসিতে গেলাম। কিউ কমই ছিল। শিক্ষক/ডাক্তার ছাড়া নতুন ভিসা বন্ধ। যারা ছিল তারা মূলত দেশে ছুটিতে এসেছে, এখন কাগজপত্রের ঝামেলা, মেয়াদ শেষ – ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিছু নেপালি লোককেও দেখলাম। ...

আমার ফুরফুরে মেজাজ বেশীক্ষন স্থায়ী হলো না। এ্যাম্বাসির গেটের সিকিউরিটি গার্ডদের হুমকি ধামকি খুব অপমানজনক মনে হচ্ছিল।সাধারণ বাংলাদেশি গার্ডদের কর্তা ব্যক্তিদের মত আচরণ খুব সহজেই আমাদের প্রবাসি রেমিটেন্স প্রদানকারিদের (GNP’র মূল contributor)অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলে।

আমাকে অবশ্য তেমন কিছুই বললো না, শুধু চোখ তুলে তাকাল। হয়তো আমার শরীরের পোষাকই এর কারন। ছোটবেলায় পড়া পারস্য কবি শেখ সাদী’র গল্পটি মনে পড়ে গেল...

হয়তো তোমার অনেক ক্ষমতা
উল্লাসের কী আছে তাতে?
চাটুকারি করে জমানো বিত্তের চেয়ে
ঢের ভাল গায়ে খেটে খাবার জোটানো।
                     --- শেখ সাদী

ভেতরে একটু একটু করে কাউন্টারের দিকে এগুচ্ছি, লম্বা লিকলিকে দু’মুষ্ঠি দাড়িঅলা এক লোক সবাইকে বকছে, কারো কথাই ভালোভাবে শুনছেনাপরে জেনেছিলাম ওনার নাম “রমজান অথবা ঈমান আলী”, সৌদিদের চেয়েও বড় “সৌদি”আসলে যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ। কোথায় আমাদের লোকদের সাহায্য করবে, তা না- খুব খারাপ আচরণ করে।

নেপালিদের আলাদা একটা লাইন দেখলাম। ব্যাপার কী? ... তারা এখানে কি করে? কথা বললাম একজনের সাথে। তারা আক্ষরিক অর্থেই বস্তা ভরে পাসপোর্ট এনেছিল। নেপালে সৌদি এ্যাম্বাসি নেই, বাংলাদেশের মাধ্যমে কার্যক্রম চালায়।
কষ্ট লাগলো, আমাদেরকে ভিসা বন্ধ করে দিয়ে সৌদি এ্যাম্বাসি নেপালি ভিন্নধর্মীদেরকে ভিসা দিচ্ছে, তাও আমাদের দেশে বসে ... আমরা কতটুকু আস্থা হারিয়েছি তাদের কাছে ... ভাবনার বিষয়।

আমি কাউন্টারে গিয়ে আমার কাছে ইমেইল এ আসা ভিসা এডভাইজিং পেপারটা দিলাম। লোকটি ভেতরে চলে গেল, ২ মিনিট পর জানাল আমার নামে কোন পেপার আসে নাই। আমার ব্যাপারে তাদের কিছু করার নাই ... ফুরফুরে মেজাজের এই আমি নিমিষেই ঘর্মাক্ত হয়ে গেলাম ... (চলবে) ...

No comments:

Post a Comment