Tuesday, December 28, 2010

সৌদি আরব ডায়েরী -২

প্রথম পর্ব লেখার পর আমার স্ত্রী বলল- সবার কথাইতো বলেছ, আমার ব্যাপারে তো কিছু লিখলে না?



আসলে ওর কথা অনেক আসবে বলেই প্রথম পর্বে কিছু লিখিনি। কিন্তু এ পর্বেও যদি কিছু না লিখি, তবে খবর আছে !!!


শাকিলা নূর- ও কিং খালিদ ইউনিভার্সিটিতে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে লেকচারার হিসেবে আছে প্রায় ২ বছর হলো। আগে মুভি তেমন একটা দেখত না, এখানে আমার পাল্লায় পড়ে সে এখন আমার মুভি পার্টনার। বলে রাখা ভালো, আমি সামুতে প্রতিটি মুভি রিভিউ পড়ি এবং ভালো মুভিগুলো ডাউনলোল্ড করে ফেলি। দারুণ ইন্টানেট স্পিড এ কাজটি সহজ করে দিয়েছে।


এখানে আমাদের অফিস টাইম হচ্ছে সকাল ৮টা-দুপুর ২টা। আমি যখন প্রথম আসলাম, একটা বিষয় আবিষ্কার করলাম। মাঝে মধ্যে আড্ডা আর বাহিরে ঘুরতে যাওয়া ছাড়া- কারো কিছু করার নাই। ফলে লাঞ্চ করে সবাই ২/৩ ঘন্টা’র একটা লম্বা ঘুম দেয়। আমি শাকিলা’র সাথে আলাপ করলাম- এভাবে অন্তত আমাদের চলতে পারেনা।


শরীর খারাপ হয়ে যাবে, মোটা হয়ে যাব। আবার শুধু শুধু বসে থাকাও যায় না, ঘুম পায়। তাই এ সময়টাই হচ্ছে মুভি দেখার জন্য আদর্শ।একে একে কত ভালো মুভি যে দেখা হয়ে গেল!! শাকিলাকে প্রায়ই বলি, আমার জন্যই সে চমৎকার চমৎকার মুভি দেখার স্বাদটুকু পাচ্ছে ...


আমরা না ঘুমিয়ে মুভি দেখি, আমাদের টিমের সবারই জানা হয়ে গেল। আমিও সবাইকে মুভি দেখার জন্য উৎসাহিত করতে থাকলাম। সম্পূর্ণ সফল না হলেও কিছুটাতো হয়েছি। শাহনাজ ও মিলন এসে মুভি নিয়ে গেল...


একদিন সকালে ... আদিল ভাই ফোন দিলেন, আমাদের রুমে আসতে চান। পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে এসেছেন, মুভি নেবেন।অনেকগুলো মুভি দিয়ে দিলাম। বিকেলেই শম্পা ভাবীর ফোন- এই আপনারা দু’জন আমাদের রুমে আসেন তো। দৌড়ে গেলাম। আমি অবাকিত এবং বিষ্মিত !!! আদিল ভাই প্রজেক্ট্রর কিনে এনেছেন, বিশাল পর্দায় মুভি দেখা হবে। ক্যাম্পাসে আদিল ভাইকে প্রায়ই প্রেজেন্টেশন দিতে হয়- তাই চিন্তা করে দেখলেন নিজের একটা থাকলে মন্দ হয় না, প্রেজেন্টেশন হবে মুভিও দেখা যাবে।


সবাইকে ডাকা হলো। শম্পা ভাবী পপকর্নের ব্যবস্থা করেছেন। সিনেমাহলের মতো পরিবেশে, আলো আধারিতে, দেখলাম King Solomon’s Mines …


আগেই বলেছি বৃহঃবার ও শুক্রবার আমাদের ছুটি থাকে। সিদ্ধান্ত হলো প্রতি বুধবার বিকেল ৪ টায় সবাই মিলে বড় পর্দায় মুভি দেখব...


অপেক্ষায় আছি আগামী বুধবারের ... Lost Voyage দেখা হবে ...



অফ টপিকঃ


অনেকেই গত পর্বের প্রশংসা করেছেন। এখানে এসে Facebook এর মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে সাইফুল ভাইয়ের সাথে, উনি ফোন করে গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন। ঢাকা হতে মুকতাদির ভাই উৎসাহ দিয়েছেন- উনিও প্রচুর মুভি দেখেন, আমরা মুভি শেয়ার করতাম। ধন্যবাদ সবাইকে ...

Sunday, December 26, 2010

সৌদি আরব ডায়েরী -১

সৌদি আরব এসেছি প্রায় ৩ মাস হয়ে গেল।চমৎকার কাটছে দিনগুলো। কেউ ভাবতেই পারেনা এখানকার গড় তাপমাত্রা ১৬’ সে.।সবাই জানতে চায় গরমে কেমন আছি... আসলে সৌদি আরবের অন্যান্য সিটি’র সাথে আভা’কে মেলালে চলবে না। “আভা” সমুদ্র সমতল হতে ২২০০ মিটার (৭২০০ফুট)উপরের শহর। জানুয়ারিতে তাপমাত্রা ০’ সে. হবারও রেকর্ড আছে। যতদূর জানা যায়, এ অঞ্চল একসময় ইয়েমেনের অন্তর্ভূক্ত ছিল, আর তা তুর্কি’রা শাসন করতো। এখনও পাহাড়ের উপরে তুর্কিদের বানানো দূর্গ দেখা যায়। সৌদি আরব আভা’কে ইয়েমেনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। সৌদিদের সাথে বর্তমানে ইয়েমেনের সম্পর্ক ভালোনা, ইয়েমেনকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্র মনে করে।
অনেক বাংলাদেশি আভা’তে আছে। রাস্তা পরিস্কার, রেস্টুরেন্ট, ড্রাইভিং, মুদি দোকান, হাসপাতাল – সব জায়গাতেই আমাদের পদচারনা। তবে ভালো জায়গাগুলো দখল করে আছে পাকিস্তানি আর ইন্ডিয়ানরা। বাংলাদেশিদের পরশ্রীকাতরতাই আমাদেরকে পেছনে ফেলে রেখেছে। আত্নীয় ছাড়া বাংলাদেশিরা অপর বাংলাদেশিকে সাহায্য করতে চায় না, অথচ পাকিস্তানি আর ইন্ডিয়ানরা তার ব্যতিক্রম।
বিগত ৩/৪ বছর ধরে সৌদি ইউনিভার্সিটিগুলো বাংলাদেশ হতে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। এখন বাংলাদেশিদের জন্য সৌদি ভিসা বন্ধ থাকলেও, আমাদের যোগ্যতা ও কর্মনিষ্ঠার কারনে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষককতা পেশায় ভিসা পাচ্ছেন।
আমরা অনেক বাংলাদেশি আভা’য় কিং খালিদ ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার/ এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসাবে কর্মরত আছি।
আমরা মোটামুটি সবাই একসাথেই থাকি। বৃহঃবার ও শুক্রবার আমাদের ছুটি।প্রায় সময়ই আমরা জম্পেস আড্ডা দেই। আমাদের বন্ধুরা ও কয়েকজন সিনিয়র/জুনিয়র ফেকাল্টি মিলে আমাদের চমৎকার একটা টিম হয়েছে।


আছেন আদিল ভাই, আমাদের মাঝে সিনিয়র, পুরাতন ঢাকা’র মানুষ, দারুণ কৌতুক আর অঙ্গভঙ্গি করে আসর মাতিয়ে রাখেন। শম্পা ভাবির সাপোর্টে আদিল ভাই আরো বেশী উৎসাহ পান।আমি আগে কৌতুক মনে রাখতে পারতাম না, আদিল ভাইয়ের কারনে এখন আমাকেও আসর জমানোর জন্য কৌতুক মনে রাখতে হচ্ছে।


আছে মিলন, ধীর ও শান্ত স্বরে কথা বলে।আর সারাক্ষণ নেটে ভাবির সাথে ঢাকা’য় চ্যাটিং। সে এখন দিন গুনছে, জানুয়ারিতে ভাবি এখানে আসছে।


ইশরাত, শাহনাজ আর দিবা- যখনই ফোন করি, শুনি কেউ না কেউ ঘুমাচ্ছে। দু’দিন হলো আমাদের আরেক বন্ধু মনির তার ওয়াইফ সহ এসেছে- ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে জয়েন করবে।