Thursday, April 14, 2011

সৌদি আরব ডায়েরি -৯ (ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ)

আলী এমবিএ করছে। সে চমৎকার ইংরেজি বলে।সাধারণত সৌদিদের, বিশেষ করে স্টুডেন্টদের কাছ হতে এত ভালো ইংরেজি শুনিনি। জানতে পারলাম সে ইউকে গিয়ে ৬ মাসের ইংলিশ কোর্স করে এসেছে। প্রায় সময়ই সে আমার কাছে আসে।আমরা গল্প করি ... তার খুব ইচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে সে হোটেল বিজনেস শুরু করবে। আগেই বলেছি “আভা” একটি টুরিস্ট সিটি, তাই Summer এ এখানে Hotel Business খুব জমজমাট থাকে।আমার কাছে বিজনেস সম্পর্কে জানতে চায়, নতুন ট্রেন্ড কি, কি করলে সে একজন সফল বিজনেসম্যান হবে, ইত্যাদি।আমি বলি, সে হা করে মনযোগ সহকারে শোনে।

... একদিন সে আমতা আমতা করে বলল, “দক্তর, একটা কথা বলি?” (এখানে টিচারদের আরবিতে দক্তর/ডক্টর বলা হয়; মাঝে মাঝে মজা লাগে- PhD না করেও ড. হয়ে গেছি) আমি বললাম, অবশ্যই; ভাবলাম হয়তো নতুন কিছু জানতে চাইবে।

--- “তোমরা বাংলাদেশিরা তো ভালো না, তবে আমার ভাগ্য ভালো যে তুমি অন্য সবার মতো নও” (You, Bangladeshi people are not good. I am lucky that you are not like others.)
ততোক্ষণে আমার চেহারা ‘লাল’ হয়ে গেছে; কোনমতে বললাম, কেন?
--- “তোমরা সৌদি আরবে চুরি করো, মানুষ মেরে ফেল, রেপ কর, সব সময় ঝগড়া ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো, তোমাদেরকে কেউ পছন্দ করে না...”

আমি অল্প ক’দিন হলো এখানে এসেছি, এখনও অনেক কিছু বুঝার বাকী আছে। আলী একজন শিক্ষিত ছেলে- সে এভাবে চিন্তা করছে, প্রকৃতপক্ষে ব্যপারটা জানি কতটা ভয়াবহ। সে আরো বলল- “তোমাদের Government কেন শিক্ষিত লোক পাঠায় না? অশিক্ষিত লোকেরা এখানে মাসে ৩০০ রিয়াল বেতনে জব করে, আর অবৈধ কাজ করে বেশী রিয়াল পেতে চায়।”

সে তার লেপটপ আমার দিকে ঘুরিয়ে দিল। ইউটিউবের একটা ভিডিও (http://www.youtube.com/watch?v=সঙ্গত
কারনেই লিংকটি সরিয়ে ফেললাম) চলছে। আমার মাথা হেট হয়ে এল। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমার দেশের মানসন্মান ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে ... ভেতরে তীব্র যন্ত্রণা, তাড়ণা অনুভব করছিলাম তার ভুল ভেঙ্গে দেবার জন্যে। অল্প সময়ের মাঝে চিন্তা করলাম কি বলা যায়। ৩ টি পয়েন্ট তার সামনে তুলে ধরলাম।

১. ইন্ডিয়ান’রা এখানে সাংগঠনিকভাবে বেশ গোছাল। তারা অপকর্ম করে বাংলাদেশিদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ানদের নিজস্ব পত্রিকা আছে, তারা সবসময় বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে প্রোপাগেন্ডা চালায়। সৌদিরা এত কিছু না বুঝেই বিভিন্ন ঝামেলায় বাংলাদেশিদের দায়ী করে, অনেকটা prejudiced।
কলকাতার লোকেরা অপকর্ম করে নিজেদের বাংগালী বলে পরিচয় দেয়, আর সৌদিরা ধরে নেয় সে বাংলাদেশি।

২. মায়ানমার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এখানে আসছে, এবং সংখ্যাটা অনেক। আমি স্বীকার করলাম এটা বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা। রোহিঙ্গারা অপকর্ম করলে বাংলাদেশের নাম হচ্ছে।

Click This Link


৩. সত্যিই কিছু বাংলাদেশি আছে যারা খারাপ কাজে লিপ্ত। তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত।


মনে হলো আলী কিছুটা বুঝতে পারলো। ইউটিউব হাতড়ালাম – তাকে Beautiful Bangladesh, Dr. Muhammad Yunus এর Social Business এর উপর clips দেখালাম। বললাম, YouTube এর একজন হচ্ছে বাংলাদেশি জ়ায়েদ করিম। সে অবাক হয়ে দেখলো, শুনলো। বাংলাদেশে এত সুন্দর! এমন লোকও আছে! আগেতো সে তা জানেনি ...


আলী’র কাহিনী এখানেই শেষ ... আলী’র মতো পৃথিবী’র বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক লোক আছে যারা বাংলাদেশকে নিয়ে একটা ভ্রান্তি’র মধ্যে আছে। বাংলাদেশের অর্জনগুলো তাদের কাছে পৌছেনি। আমরা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং কী দিয়ে করবো? ২১ শে ফেব্রুয়ারি International Mother Language Day- অথচ বিদেশে আমাদের রাষ্ট্রদূতদের কোন ভূমিকাই নেই, তারা জানেনা কখন কি করতে হবে। আমাদের দেশের খুনীরা হয় রাষ্ট্রদূত।“পাট” – সেতো সোনালী অতীত। সিলেট, কক্সবাজার অথবা সুন্দরবনকে কি আমরা সেভাবে তুলে ধরতে পারছি?

কী দিয়ে আমরা ব্র্যান্ডিং করবো?


ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেদিন নোবেল পুরষ্কার পেলেন, সারা পৃথিবী জেনে গেলে বাংলাদেশের কথা। মানুষ যতবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানলো, তার চেয়েও বেশী জানলো বাংলাদেশকে। কয়েকদিন আগে আমার এক বড়ভাই ফেসবুকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি YouTube Clip শেয়ার করলেন। আমি তন্ময় হয়ে শুনলাম তার Social Business এর কথা। কতটা জৌলুস তার বক্তৃতার মাঝে। বাংলাদেশে কি আর একজন ব্যক্তি আছে যে এত চমৎকারভাবে ইংরেজিতে বলতে পারবে? সবাইকে মোটিভেট করতে পারবে?
সারা পৃথিবী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানে, জানে আমাদের এ দেশটাকে। আজ আমরা তাঁকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে নামাচ্ছি, তাতেও বোধয় শান্তি পাচ্ছিনা। আজ আমরা হিসেবের খাতাপত্র খুলে বসেছি। হিসাব কষছি- ব্যক্তি ইউনূস কতটুকু পেল, খুঁজে বের করছিনা বাংলাদেশ কতটুকু পেল।

একবার বিরিশিরি গিয়েছিলাম বেড়াতে। কথায় কথায় গ্রামের মানুষদের জিঙ্গেস করি গ্রামীন ব্যাংকের কথা, ব্র্যাকের কথা। তাদেরকে অসহায় মনে হলো। তারা আগে কখনও ঋণ কি জানতোনা, এখন তারা ঋণের চাপে জর্জরিত। তারা নতুন ঋণ পায় পুরুনো ঋণ শোধ করার জন্য। আছে উচ্চ সুদ। তার মাঝে অনেক ব্যতিক্রমি সফল মানুষও আছে।


কিন্তু উপরের YouTube Clip টিতে যেভাবে Microcredit এর ধারণা আছে, তাতে কিন্তু গরীব লোকদের সফল হবারই কথা। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো আমাদের কথা ও কাজে মিল নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন একরকম, কিন্তু হয়তো করেছেন আরেক রকম।


... তারপরেও আমি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষ দেই না। তিনি আমাদের দিয়েছেন অনেক। আমরা তাকে ছুড়ে ফেলে না দিয়ে তার ভুলটুকু শোধরাতে পারতাম। এখনো তার অনেক কিছু দেয়ার আছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। উনি বলেছিলেন, (হুবুহু এরকম নয়) একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠে প্রথম প্রজন্মের দূর্নীতির উপর ভিত্তি করে, ইউরোপের শিল্প বিপ্লব দূর্নীতির ফসল- আজ আমরা তার সুফল ভোগ করছি ...


আমাদের দরকার যোগ্য নেতৃত্ব, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্ব- যারা আজীবন দেশের জন্য কাজ করে যাবেন। যাদেরকে কোন প্রকার বয়সসীমা দিয়ে আটকে রাখবোনা। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং অবশ্য একদিক দিয়ে হয়েই আছে। শেখ হাছিনা আর খালেদা জিয়া’র প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি আমাদেরকে বিশ্বের দরবারে খুব দ্রুতই পরিচিত করে তুলছে। তাদের বোধয় অবসরে যাবার বয়সসীমা নেই !!!


বিশেষ নোটঃ

আজ (মার্চ ১৫) সামহয়ারইনব্লগে একটা YouTube Clip পেয়ে গেলাম। খুবই interesting মনে হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাছ হতে প্রথম ঋণ গ্রহনকারি সুফিয়া বেগমের কথা জানি, আরো জানি তিনি মারা গেছেন- নিঃস্ব অবস্থায়। কিন্তু এই YouTube Clip দেখাচ্ছে সুফিয়া বেগম এখনও বেঁচে আছেন।

1 comment:

  1. অনেক ভাল লাগল,ধন্যবাদ
    http://www.statenewsbd.com/

    ReplyDelete